বুধবার, ৩১ মে ২০২৩, ০৫:১৫ পূর্বাহ্ন
১১ অক্টোবর ২০২০ ইং সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশ হেফাজতে রায়হান উদ্দিন নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। তিনি সিলেট নগরের আখালিয়া নেহারিপাড়া এলাকার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে।
রায়হান উদ্দিনের পরিবারের অভিযোগ, রায়হানকে ধরে এনে টাকার জন্য নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ আকবরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এসআই আকবরের নিজ গ্রাম ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার বগইর গ্রামে। প্রায় ১৫ শতাংশ জায়গার ওপর নয়নাভিরাম একটি একতলা ভবন। বাড়ির সামনেই কাজ চলছে সুবিশাল গেটের।
এসআই আকবর হোসেনের আলিশান বাড়ি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে আকবরের আলিশান বাড়ির ছবি।
এসআইয়ের মতো ছোট পদে চাকরি করে কীভাবে ওই বাড়ি তৈরি করলেন- সেটি নিয়ে সবাই প্রশ্ন তুলছেন।
বাড়ির উঠানে বেশ কিছু মানুষের আনাগোনা। তবে ভবনের দরজা-জানালা সব লাগানো। আকবরের বাবা অসুস্থ, মা কথা বলবেন না বলে জানানো হয়।
এসআই আকবরের বাবা জাফর আলী ভূঁইয়া স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় আসামি হয়ে একমাস জেল খাটেন জাফর। এরপর স্কুল থেকে চাকরিচ্যুত হন তিনি। মামলায় জড়ানোর পর সহায়-সম্পদ যা ছিল তা সবই হারিয়েছেন জাফর আলী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৩ সালে আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ২০০৫ সালে উপজেলার ফিরোজ মিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন আকবর।
২০০৭ সালে পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি নেন তিনি। কয়েক বছর চাকরি করার পর উপপরিদর্শক (এসআই) পদে চাকরির জন্য পরীক্ষা দেন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এসআই পদে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই পাল্টে যেতে থাকে আকবর ও তার পরিবারের ভাগ্য।
পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয় আকবর। পুলিশে চাকরি পাওয়ার পর নিজ গ্রামে বাড়ি ও জায়গা-জমিসহ অঢেল সম্পদ গড়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পুরোনো ঘর ভেঙে নির্মাণ করা হয়েছে আলিশান বাড়ি।
ইতোমধ্যে বাড়ির প্রথম তলার কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে আধুনিক ফটক তৈরির কাজ। পুলিশে চাকরির বদৌলতে বাবার খোয়ানো সব সম্পদ ফিরে এসেছে আকবরের হাত ধরে।
উক্ত মৃত্যুর ঘটনায় এখন নিজ গ্রামেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আকবর।
কীভাবে আলিশান বাড়িসহ এত সম্পদের মালিক হয়েছেন সে আলোচনা এখন গ্রামের সবার মুখে। অনেকে পুলিশ কর্মকর্তা আকবর ও তার পরিবারের অঢেল সম্পদের উৎস অনুসন্ধানের দাবি জানিয়েছেন।
বগৈর গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, পুলিশে চাকরি হওয়ার পরই অবৈধভাবে টাকা উপার্জন করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন আকবর। তিনি যে ঘটনা ঘটিয়েছেন তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক এবং আশুগঞ্জের মানুষের জন্য কলঙ্ক। আশুগঞ্জকে কলঙ্কমুক্ত করার জন্য বন্দরবাজার ফাঁড়ির ঘটনা সঠিকভাবে তদন্ত করে আকবরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
পুলিশ কর্মকর্তা আকবরের ছোট ভাই আরিফ ভূঁইয়া বলেন, আমরা বিশ্বাস করি আমার ভাই এ ধরনের কাজ করতে পারে না। আমরাও চাই ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত হোক। আমার বিশ্বাস, ভাই টাকার জন্য কাউকে মারতে পারে না।
আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সি বলেন, আকবর যে ঘটনা ঘটিয়েছেন- সেটি পুরো আশুগঞ্জের জন্য লজ্জার। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে আকবর যদি দোষী প্রমাণিত হন তাহলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার দাবি জানাই।