বৃহস্পতিবার, ০১ Jun ২০২৩, ১২:২৫ পূর্বাহ্ন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের শঙ্করদাহ গ্রামে আশরাফুল ইসলাম শান্ত (১৯) নিজ ঘরে তার চাচা আক্কাস মিয়ার ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছে । সম্পর্কে তাহারা আপন চাচা ভাতিজা ।
শুক্রবার ৩০ অষ্টোবর ২০২০ ইং রাত ১০টার দিকে আক্কাস মিয়া (৫০) তার বড় ভাইয়ের ঘরে ঢুকে ছুরিকাঘাত হত্যা করে ভাতিজা আশরাফুল ইসলাম ( শান্ত) কে। শান্ত সে মাহফুজ মিয়ার ছেলে ।
নিহত শান্তের বাবা , ও বোন জানায় , মাহফুজ ও আক্কাছ ২ ভাই প্রবাসে বহু বছর একই সাথে বসবাস করত ও সমস্ত টাকা পয়সার হিসাব ছোট ভাই আক্কাছের কাছে ছিল , কিন্তু বড় ভাই মাহফুজকে কানা কড়িও দেয় নি , হিসাব চাইলেই শুরু হয় যতসব বিপত্তি । জায়গা সম্পত্তি বিষয়ে উভয়ের মধ্যে রেষারেষি চলে আসছিল, এরই জেরে শান্তকে হত্যা করে । রাত ১০ টায় শান্ত ঘুমিয়েছিল ঘরে, আক্কাছ মিয়া ঘরে প্রবেশ করে শান্তকে বাম পাজরের নীচে ছুরিকাঘাতে করে স্থান ত্যাগ করে চলে যায় , আমাদের আর্তচিৎকারে পাড়া প্রতিবেশী শান্তকে উদ্ধার করে পার্শবর্তী মাধবপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়, কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করে । টহলরত মাধবপুর থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য হবিগনঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে । আক্কাছ মিয়াকে বাধা দিতে গিয়ে ছোরা শোন্তের বাবা মাহফুজ মিয়ার ডান হাতের কনইয়ের উপর বিদ্ধ হয় ।
নিহত শান্তের মা জানায় – শুক্রবার রাতে আক্কাস লুকায়িত ছুরি নিয়ে ঘরের দরজা খুলতে বলে, আমি দরজা খুলে দিলে ঘরে ঢুকে শান্তকে চুলের মুটি ধরে মেঝেতে ফেলে ছুরিকাঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় শান্তকে মাধবপুর উপজেলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়।
নিহত শান্তের দাদি জানান , আক্কাছ আমার পেটের সন্তান ও শান্ত আমার বড় ছেলের ঘরের নাতী ,শান্ত- মাহিমাকে প্রেমের প্রস্তাব ও কথা বলাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। কেন খুন করল – এ বিষয়ে জানতে চাহিলে তিনি জানান, শান্ত ও মাহিমা আমার নাতী – নাতনী । প্রেম বিষয়ে মন কষাকষি আছে , এ জন্য নাতী শান্ত ঢাকায় একটি ব্যাগের কারখানায় চাকরী নেয় । করোনা কালীন সময়ে শান্ত আবার বাড়িতে চলে আসে ।
আক্কাছ মিয়ার স্ত্রী আছমা আক্তার সূত্র জানা যায়, শঙ্করদাহ গ্রামের মৃত কদর আলী মিয়ার ছেলে আক্কাস মিয়া দীর্ঘ ২৬ বছর সৌদি আরবে প্রবাসের মধ্যে ২০ বছর স্ত্রী সহ প্রবাসী ছিলেন ,এর মধ্যে তার ২ মেয়ে ও ২ ছেলে প্রবাসেই জন্ম নেয় । প্রবাস জীবনের অবস্থা খারাপ হওয়ায় আড়াই বছর পূর্বে স্বপরিবারে দেশে ফিরেন আক্কাছ। বড় মেয়ে সনিয়া ইসলামপুর আলহাজ্ব কাজী শফিকুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষের ছাত্রী ও ২য় মেয়ে মাহিমা সে স্থানীয় হরিণবেড় শাহজাহান উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী। দেশে আসার পর থেকে আক্কাস মিয়ার স্কুল পড়ুয়া মেয়ে মাহিমাকে প্রেমের প্রস্তাব, ভয় ভীতি সহ নানা ভাবে উত্যক্ত করতো নিহত শান্ত । এ ঘটনা নিয়ে পারিবারিক ভাবে বহুবার সালিশ হয় ও ষ্টাম্পে লিখত হয় , তার পর শান্ত ঢাকায় একটি ব্যগের কারখানায় চাকরী নেয় । কিছু দিন পর শান্ত আবার বাড়িতে চলে আসে। আবার সে আমার মেয়ের পেছনে লাগে । এ বিষয়ে শান্তের বিরুদ্ধে নাছিরনগর থানায় অভিযোগ করা হয় ।
পাড়া প্রতিবেশী জানায় , শান্তের প্রেমের প্রস্তাবে মাহিমা রাজী না । নাছোরবান্দা তা মানতে নারাজ, ছায়ার মতো মাহিমার পেছনে লেগে আছে , এ নিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে মনোমালিন্য চলছে,অনেকবার সালিশ বৈটক হয়েছে । এক পর্যায়ে শান্ত ঢাকায় একটি ব্যাগের কারখানায় চাকরী নেয় । করোনা কালীন সময়ে শান্ত আবার বাড়িতে চলে আসে ।
নাসিরনগর থানার উপ-পরিদর্শক বিট পুলিশ ইব্রাহীম আকন্দ এসআই জানান, এ ঘটনায় ঘাতক চাচা আক্কাস মিয়াকে তার নিজ ঘর থেকে আটক করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে নাছিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন ,ঘাতক আক্কাস মিয়াকে তার নিজ ঘর থেকে আটক করা হয়েছে। নিহতের লাশ ময়না তদন্তে আছে , এ বিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন ।