মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩, ০৬:৩৫ অপরাহ্ন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নে অবস্থিত চম্পকনগর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, ১৫৬ শতক জায়গার উপর ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়
এ প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার আলো ছড়ানো এ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পর থেকে এর সুনাম চারিদিক, অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা ব্যবস্থায় এর উন্নতি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে,এর সুবাদে এ এলাকায় শিক্ষার হার অনেক বেশি এবং দিন দিন তা বেড়েই চলেছে । আলিয়াজুরী নদীর তীর ঘেঁষে এ প্রতিষ্টান অবস্থিত এবং স্কুল কে কেন্দ্র করে এখানে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত স্কুলে কোন প্রকার দ্বন্দ্ব-সংঘাত ছাড়া খুব সুন্দর ভাবে চলছিল
কিন্তু গত প্রায় দুই বছর যাবত স্কুলের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষকের সাথে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দ্বন্দ্ব চলছে,
এর ফলে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নিজ ক্ষমতাবলে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন আটকে দিয়েছে কেহই বেতন-বোনাস পায়নি ঈদ ও করতে পারেনি ।
এ বিষয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শহীদুল হক চৌধুরী সাথে কথা বলে জানা যায়,তিনি স্কুলর জন্য ৬ শতক জায়গায় দান করেছেন, স্কুলের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল উদ্দিন চৌধুরী অবৈধ ভাবে স্কুল পরিচালনা করছে, স্কুল পেডে লিখিতভাবে নিজ স্বাক্ষরে তাকে ৪ বার কারণ দর্শানোর নোটিশ ২ বার সাময়িক বরখাস্ত ও ১ বার বরখাস্ত প্রত্যাহার করা হয়।
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মোঃ আইয়ুব খান এবং আলী আজম জানান, (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে এসাইনমেন্ট এর টাকা এসএসসি ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি, আদায় সহ নানা অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত, তারা আরো জানান, প্রতিষ্ঠানের খসড়া বাজেট, উন্নয়ন কল্পনা ছুটির তালিকা, বিনা বেতনে অধ্যয়নের উপযোগীদের তালিকা, কোচিং বাণিজ্য, ফরম ফিলাপ এর অতিরিক্ত টাকা নেওয়া, ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে অ্যাসাইনমেন্টের নামে টাকা আদায়, অনলাইনে ক্লাস না করা সহ অন্যান্য অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে (ভারপ্রাপ্ত)শিক্ষকমোস্তফা কামাল চৌধুরী স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সহ আরো ২ জন অভিভাবক সদস্যকে সাথে নিয়ে, স্কুলকে নিজেদের কব্জায় রেখে অনৈতিক ভাবে এর আয় উন্নতি সমস্ত কিছু তাদের পকেটে নিতে চায়,কিন্তু তিনি তাহাদেরে অসৎ উদ্দেশ্য সমর্থন না করায় আমি ও স্কুলের সকল শিক্ষক কর্মচারীদের বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার এবং স্কুল ধ্বংসে মেতেছে, যেসব অভিযোগ তারা করেছে এর কোন প্রকার প্রমাণ নেই।
স্কুলের সভাপতি ক্ষমতা বলে ১/ স্কুলের বড় বড় গাছ বিক্রি করে পকেটে ভরেছে,এ নিয়ে মামলা হয়েছে,২/বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর ভেঙে জায়গা দখলের চেষ্টা করেন, মামলা নং সি, আর,১৩/৬, চলমান, ৩/ বিদ্যালয়ের মাঠ প্রাঙ্গনে ধান সিদ্ধ এবং খর শুকানোর জায়গা করেন, ৪/বিভিন্ন অজুহাতে সরকারি বেতন ভাতা দিতে স্বাক্ষর করেন না ৫/বিদ্যালয়ের বাউসারে স্বাক্ষর করেন না ৬/বেতন, ভাতাদি, বাউছারে কেন স্বাক্ষর করেন না এ বিষয়ে শিক্ষকগণ উনার সাথে কথা বললে তিনি তাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন, ৭/চম্পকনগর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার এর উপর মামলা করেন এ নিয়ি মামলা এখনও চলমান, মামলা নং জি আর ১৮/৫৬.-২০১৯,
৮/তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন নাম ব্যবহার করেন,প্রকৃত নাম গোপন করে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হওয়ায় জনৈক হালিমা আক্তার ইউএনও বরাবর দরখাস্ত করেন, এবং এর সত্যতা পায়, ক/ভোটার আইডি কার্ডে মোঃ ছানাউল হক চৌধুরী, খ/জন্ম নিবন্ধনে মোঃ ছানাউল হক চুন্নু চৌধুরী,গ/ বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে মোঃসহিদুল হক চৌধুরী, ঘ/এস এ খতিয়ানে সমু মিয়া চৌধুরী, ঙ/সভাপতির ছেলে,মেয়ের জন্ম নিবন্ধনে চুন্নু চৌধুরী। তিনি মোট ৪/৫ টি নাম বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেন।
স্কুলের সকল শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আক্ষেপে সাথে জানায়, সভাপতিসহ দুই একজন সুবিধাভোগী লোক, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে তাকে বরখাস্তের জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন, স্কুলের না এসে কোন প্রকার মিটিং এবং রেজুলেশন ব্যতীত প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত এবং সকল শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন আটক করে রেখেছেন সভাপতি, তাই সকল শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে এক প্রতিবাদ লিপি পেশ করেন।
শিক্ষকরা আরও জানান, সরকারি মাসিক বেতন এবং ঈদ বোনাসে সভাপতি স্বাক্ষর না করায় টাকা তুলতে পারেনি এবং ছেলেমেয়ে নিয়ে তারা ঈদুল আযহার কুরবানী দিতে পারেনি।
সিনিয়র শিক্ষক রাহেলা বেগম জানান, আমি স্কুল কমিটির সদস্য বটে,বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সকল মিটিংয়ে আমাকে উপস্থিত থাকতে হয়, বিদ্যালয়ে সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়ে রেজুলেশনে লিখিত আকারে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত ও নতুন করে আমাকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
আইন ঃ- মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত পরিপত্র ও বিধিবিধান সমগ্র বই পৃষ্টা নং ৬৮১, (ঘ) এতে উল্লেখ আছে শৃঙ্খলামূলক কার্যাদি ;২/ শিক্ষক কর্মচারীগণের চাকুরীর শর্তাবলী অনুসারে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও অনুমোদন বা বরখাস্ত বিষয়ে বোর্ডের পূর্ব অনুমোদন গ্রহণ ব্যতীত উক্তরূপে কোন প্রকার দণ্ড আরোপ করা যাইবে না।
পৃষ্ঠা নং ৭৫৭, শাস্তি প্রয়োগের ক্ষমতা ঃ- বিধি- ১১ অনুযায়ী শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা, ক্ষমতাসম্পন্ন কর্তৃপক্ষের উপর ন্যস্ত থাকবে, তবে আপিল ও সালিশি কমিটি কর্তৃক শাস্তির প্রস্তাব পরীক্ষা ও বোর্ড কর্তৃক অনুমোদন ব্যতিরেকে কোন শিক্ষকের উপর বরখাস্ত বা অপসারণ এর শাস্তি আরোপ করা যাবে না।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল জলিল জানান, তদন্ত সাপেক্ষে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহি অফিসার কেএম ইয়াসির আরাফাত জানান , স্কুলের শিক্ষা কর্মচারী বোনাস পাইনি ঈদ করতে পারেনি এ মর্মে (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক কর্তৃক অভিযোগ এসেছে এবং সর্ববিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হামিদুল হক হামদু জানান, চম্পকনগর মডেল উচ্চ বিদ্যালয় স্কুল এর সুনাম রয়েছে, সভাপতিকে স্কুলের শিক্ষক এবং কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার জন্য আমি নিজে অনুরোধ করছি কিন্তু তিনি তাতে কর্ণপাত করেননি।