তৃতীয় দফা বন্যার মুখোমুখি সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের লাখ লাখ মানুষজন

তৃতীয় দফা বন্যার মুখোমুখি সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের লাখ লাখ মানুষজন

বিশেষ প্রতিনিধি:- তৃতীয় দফা বন্যার মুখোমুখি হাওরের জেলার সুনামগঞ্জের মানুষজন। বৃষ্টি হলেই সুরমা কুশিয়ারা,বৌলাই,চলতি,যাদুকাটা,কালনীসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। ফলে বৃষ্টিপাতে কখনো বাড়ে পানি, কখনো আবারো কমে। নদীর পানি কিছুটা কমলেও বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে আবার বাড়ে নদ-নদীর পানি। জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি বলতে এখনো সবকটি নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কাছে গত বৃহস্পতিবার (১১/০৭/২৪) সকালে সুরমা নদীর পানি সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জের ষোল ঘর পয়েণ্টে বিপদ সীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় ঐ পয়েন্টে ৭ সেণ্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৫৫মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে এবং ভারতের চেরাপুজ্ঞিতে ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর আগের দিন বৃষ্টি হয়েছিল ২৬০ মিলিমিটার।

ষোলঘর এলাকার সবজি ব্যবসায়ী লিটন বাবু এবং উত্তর আরপিন নগর এলাকার বাসিন্দা জামিলা বেগম জানান, এইযে পর পর তিনবার বন্যার তান্ডব আমরা নি¤œআয়ের মানুষজন রয়েছি চরম বিপাকে। আমাদের ঘরে পানি এখনও ঢুকেনি আর দুই থেকে তিন ইঞ্চি পানি বাড়লে আমাদের ঘরে পানি ওঠে যাবে। টানা বৃষ্টিতে আমরা আগে ক্ষতিগ্রস্থ হই।

ব্যবসায়ী শামসুল আলম রাজু বলেন, টানা বৃষ্টিতে বাসা থেকে বের হতে পারি নাই। শহরে সবদিকে বর্ষার পানি যেন থৈ থৈ কওে, কোনও দিকে যাওয়ার মতো কোন অবস্থা নেই। আমি পাইকারি পণ্য সাপ্লাই দেই। আমার কাজের লোকজনও আসতে পারে নাই। একদিনে আমার অনেক টাকা ক্ষতি হবে। বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হলে তো কি পরিমাণে লোকসান হবে তা বলে বুঝাতে পারবও না। এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান,দ্বিতীয় দফার বন্যায় সুনামগঞ্জে আবাদকৃত ১৭০০ শত হেক্টর আউশ ধান পানিতে তলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ হবে প্রায় ১১ কোটি টাকার উপরে।
এদিকে মাৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায় দ্বিতীয় দফার বন্যায় সুনামগঞ্জ জেলায় ৮ হাজার পুকুর ডুবে প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন পোণা ও বড়মাছ হাওরে ভেসে গিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ৭২ কোটি টাকা। অপরদিকে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন ইতিমধ্যে সাম্প্রতিক বন্যায় জেলার ১২টি উপজেলায় মোট ৫০০ শত কিলোমিটার গ্রামীন পাকা সড়ক একেবারেই ধবংস হয়েছে যার ক্ষতির প্রতিমাণ হবে ৯২৬ কোটি টাকা।

এদিকে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মামুন হাওলাদার বলেন,, আগামী ২৪ ঘণ্টা বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। বৃষ্টি হলেই জেলার নদ-নদীর পানি কিছুটা বাড়বে। তবে সেটার পরিমাণ বেশি হবে না। আগের মতো পরিস্থিতি হওয়ার কোনো পূর্বাভাস নেই।

এদিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানিয়েছেন,ইতিমধ্যে সরকারের মাধ্যমে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পুরো জেলায় ৯ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছিলেন এবং বন্যার্তদের জন্য ১৩৩৪ মেট্রিকটন জিআরএর চাল,নগদ ২৬ লাখ ১০ হাজার টাকা,শুকনো খাবার ৯ হাজার প্যাকেট,গোখাদ্য বাবত ১০ লাখ টাকা,শিশু খাবার বাবত ১০ লাখ বিতরণ করা হয়েছে। অপরদিকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়,ইতিমধ্যে জেলায় বিশুদ্ধ পানীয় জলের প্রায় ৩ হাজার টিউবওয়েল পানিতে নিমর্জ্জিত হয়েছিল। ফলে অনেকেই ভাসমান পানি পান করে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সরাইল ২৫ ব্যাটালিয়নের বিশেষ অভিযানে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় পণ্য আটক

তৃতীয় দফা বন্যার মুখোমুখি সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের লাখ লাখ মানুষজন

আপডেট টাইম : ০৩:২০:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪

তৃতীয় দফা বন্যার মুখোমুখি সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের লাখ লাখ মানুষজন

বিশেষ প্রতিনিধি:- তৃতীয় দফা বন্যার মুখোমুখি হাওরের জেলার সুনামগঞ্জের মানুষজন। বৃষ্টি হলেই সুরমা কুশিয়ারা,বৌলাই,চলতি,যাদুকাটা,কালনীসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। ফলে বৃষ্টিপাতে কখনো বাড়ে পানি, কখনো আবারো কমে। নদীর পানি কিছুটা কমলেও বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে আবার বাড়ে নদ-নদীর পানি। জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি বলতে এখনো সবকটি নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কাছে গত বৃহস্পতিবার (১১/০৭/২৪) সকালে সুরমা নদীর পানি সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জের ষোল ঘর পয়েণ্টে বিপদ সীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় ঐ পয়েন্টে ৭ সেণ্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৫৫মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে এবং ভারতের চেরাপুজ্ঞিতে ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর আগের দিন বৃষ্টি হয়েছিল ২৬০ মিলিমিটার।

ষোলঘর এলাকার সবজি ব্যবসায়ী লিটন বাবু এবং উত্তর আরপিন নগর এলাকার বাসিন্দা জামিলা বেগম জানান, এইযে পর পর তিনবার বন্যার তান্ডব আমরা নি¤œআয়ের মানুষজন রয়েছি চরম বিপাকে। আমাদের ঘরে পানি এখনও ঢুকেনি আর দুই থেকে তিন ইঞ্চি পানি বাড়লে আমাদের ঘরে পানি ওঠে যাবে। টানা বৃষ্টিতে আমরা আগে ক্ষতিগ্রস্থ হই।

ব্যবসায়ী শামসুল আলম রাজু বলেন, টানা বৃষ্টিতে বাসা থেকে বের হতে পারি নাই। শহরে সবদিকে বর্ষার পানি যেন থৈ থৈ কওে, কোনও দিকে যাওয়ার মতো কোন অবস্থা নেই। আমি পাইকারি পণ্য সাপ্লাই দেই। আমার কাজের লোকজনও আসতে পারে নাই। একদিনে আমার অনেক টাকা ক্ষতি হবে। বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হলে তো কি পরিমাণে লোকসান হবে তা বলে বুঝাতে পারবও না। এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান,দ্বিতীয় দফার বন্যায় সুনামগঞ্জে আবাদকৃত ১৭০০ শত হেক্টর আউশ ধান পানিতে তলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ হবে প্রায় ১১ কোটি টাকার উপরে।
এদিকে মাৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায় দ্বিতীয় দফার বন্যায় সুনামগঞ্জ জেলায় ৮ হাজার পুকুর ডুবে প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন পোণা ও বড়মাছ হাওরে ভেসে গিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ৭২ কোটি টাকা। অপরদিকে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন ইতিমধ্যে সাম্প্রতিক বন্যায় জেলার ১২টি উপজেলায় মোট ৫০০ শত কিলোমিটার গ্রামীন পাকা সড়ক একেবারেই ধবংস হয়েছে যার ক্ষতির প্রতিমাণ হবে ৯২৬ কোটি টাকা।

এদিকে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মামুন হাওলাদার বলেন,, আগামী ২৪ ঘণ্টা বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। বৃষ্টি হলেই জেলার নদ-নদীর পানি কিছুটা বাড়বে। তবে সেটার পরিমাণ বেশি হবে না। আগের মতো পরিস্থিতি হওয়ার কোনো পূর্বাভাস নেই।

এদিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানিয়েছেন,ইতিমধ্যে সরকারের মাধ্যমে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পুরো জেলায় ৯ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছিলেন এবং বন্যার্তদের জন্য ১৩৩৪ মেট্রিকটন জিআরএর চাল,নগদ ২৬ লাখ ১০ হাজার টাকা,শুকনো খাবার ৯ হাজার প্যাকেট,গোখাদ্য বাবত ১০ লাখ টাকা,শিশু খাবার বাবত ১০ লাখ বিতরণ করা হয়েছে। অপরদিকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়,ইতিমধ্যে জেলায় বিশুদ্ধ পানীয় জলের প্রায় ৩ হাজার টিউবওয়েল পানিতে নিমর্জ্জিত হয়েছিল। ফলে অনেকেই ভাসমান পানি পান করে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।